ত্বকী হত্যাকান্ডে আমরা খুব দ্রুত আদালতে একটি সুষ্ঠু প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। এ মামলার তদন্তে গতি পেয়েছে। মামলায় সম্প্রতি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আল্লামা ইকবাল রোড এলাকার আজমেরী ওসমানের তৎকালীন উইনার ফ্যাশন (টর্চার সেল) এবং শহরের চারার গোপ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল (যেখানে ত্বকীর মরদেহ পাওয়া গেছে) পরিদর্শন কালে এসব কথা বলেন র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা। এ সময় রিমান্ডে থাকা শাফায়েতের উপস্থিতিতে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন র্যাবের কর্মকর্তারা
পরিদর্শন কালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ বলেন, উইনার ফ্যাশন যেটা ছিল, সেটি এখন আর নেই। সেখানে আটতলা বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও এ–সংক্রান্ত তথ্য আগের তদন্তেও বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে। ত্বকীকে অপহরণের পর যেখানে হত্যা করা হয় এবং লাশ ফেলা হয়, প্রতিটি জায়গা তদন্তের স্বার্থে তাঁরা পরিদর্শন করেছেন। রিমান্ডে থাকা আসামি (শাফায়েত) ত্বকী হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছি এবং আসামিও অনেক জায়গা দেখিয়ে দিয়েছেন, যেগুলোর আমরা মিল পেয়েছি।’
তানভীর মাহমুদ বলেন, ত্বকী হত্যার তৎকালীন তদন্তকারীরা এখানে কেউ নেই। যেহেতু মামলাটির তদন্ত আবার শুরু করা হয়েছে। তাই তাঁরা ঘটনাস্থল দেখতে গেছেন। স্থানীয় যাঁরা আছেন, যাঁরা ওই সময়কার প্রতিবেশী, দোকানি যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। রিমান্ডে থাকা (শাফায়েত) আসামির দেওয়া তথ্যের সঙ্গে তাঁদের পাওয়া তথ্যের মিল পাওয়া গেছে।
ত্বকীকে হত্যার পর যে গাড়িতে করে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, গাড়ির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত একটি সুষ্ঠু প্রতিবেদন আমরা আদালতে জমা দিতে পারব বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
এসময় র্যাবের তদন্ত দলে ছিলেন র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা, মেজর অনাবিল ইমাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন ও র্যাব-১১–এর মিডিয়া কর্মকর্তা সনদ বড়ুয়া।
ত্বকী হত্যায় অভিযুক্ত আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও জাতীয় পার্টি সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভাতিজা। ত্বকী হত্যার আসামিরা আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সাড়ে ১১ বছর ধরে আসামিদের বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। কিন্তু বিচারের উদ্যোগ নেয়নি সরকার। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পটপরিবর্তন হলে ত্বকী হত্যা মামলার বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১০ দিনে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক মো. জামশেদসহ পাঁচ ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। তাঁদের মধ্যে আজমেরী ওসমানের সহযোগী কাজল হাওলাদার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দুই আসামি শাফায়েত হোসেন ও মামুন মিয়াকে ছয় দিনের রিমান্ড শেষে গত রোববার আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। অপর সহযোগী ইয়ার মোহাম্মদ পারভেজ কারাগারে আছেন।
হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর ও ইউসুফ হোসেন লিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ওই সময় ত্বকী হত্যা মামলার পাঁচ আসামি সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, সালেহ আহমেদ সীমান্ত, রিফাত বিন ওসমান ও তায়েব উদ্দিন জ্যাকিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বর্তমানে এই আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক আছেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।