সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। মঙ্গলবার (৬আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক ফারহানা মুনা ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ না করে কোন রকমের সিদ্ধান্তে না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের কাছে অনুরোধ জানান।
সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। এত অন্যায় অত্যাচার খুন গুম করেছে এত লুটপাট করেছে পাপের ভার আল্লাহ সহ্য করতে পারে নাই। তাই এত ঘৃণ্যভাবে পতন হয়েছে। আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করি সকলেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনকল্যাণে একনিষ্ঠ। এ পরিস্থিতিতে জেলা আমাদের যে উদ্দেশ্য ডেকেছেন আমাদের করণীয় কি সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি।
সাবেক এ এমপি বলেন, দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিজয়ে প্রথমত প্রশাসন তাদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন আনবে এটা আমি অনুভব করি। এ ১৬ বছর প্রশাসনে অনেক স্বাধীনচেতা ভালো কর্মকর্তা থাকার পরেও স্বৈরশাসকের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন নাই। আজকে নতুনভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনাদের মন মস্তিষ্ক চিন্তা পরিবর্তন আনবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি। এ প্রশাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে হবে এটা আমরা বুঝি।
সভাপতির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, এখানে সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। ঘটনার পরদিন দ্রুত আমি সবাইকে ডেকেছি। আমরা একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ চাই। সুশাসন যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার থাকবে চাঁদাবাজি হবে না মাস্তানি হবে না মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে পারবে সেরকম একটি নারায়ণগঞ্জ চাইলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। সুন্দর নারায়ণগঞ্জের জন্য কাজ করতে হবে। এজন্য আমি সবাইকে ডেকেছি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হবে সরকারি সম্পত্তি আমাদের সবার। আমাদের অনেক রদবদল হবে কিন্তু এ প্রশাসন থাকবে। এ প্রশাসন দিয়ে আমাদের দেশ গঠন করতে হবে। সুতরাং সরকারি কোনো সম্পত্তিতে আঘাত করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন যেন পরিচালিত হতে পারে তার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো। যারা বিভিন্ন অনিয়ম করে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবে আমাদের ছাত্র জনতার অর্জনকে নষ্ট করতে চাই সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, যারা হামলা ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করছে তারা বিএনপির লোক নয়। দুইদিন আগেও যারা আওয়ামীলীগ করেছে আজকে তারা বিএনপি হয়ে গেছে। বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, বিএনপি গণতন্ত্রের চর্চা করে। আমরা এতো কস্ট ও শ্রমের বিনিময় যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই অর্জন নস্ট করার রাজনীতি বিএনপি করে না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারদেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, এই রকম নৈরাজ মূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করার জন্য যা যা করতে হবে সেই ব্যবস্থা আমাদের নিতে বলেছে।
জেলা অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (এসপি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আমীর খসরু বলেন, গতকাল (৫ আগস্ট) থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগে কারণে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ জায়গায় চলে গিয়েছেন। দ্রুতই থানা কার্যালয়ের সংস্কার করে তাদের থানায় সংযুক্ত করা হবে। আপনারা সহযোগিতা করেন।
এসময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী ফারহানা মানিক মুনাসহ জেলা ও মহানগর জামায়াত ইসলাম, জেলা ও মহানগর ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত ইসলাম, শ্রমিক সংগঠন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।