নারায়ণগঞ্জের শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে (৫৯) সাত টুকরো করে হত্যার ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে ঘাতক রুমা আক্তার (২৮) ও তার সহযোগী বান্ধবী রোকসানা ওরফে রুকু (২৬)। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হায়দার আলীর আদালত পর্যায়ক্রমে তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। শুক্রবার রাত ৮টায় নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান আদালতে আসামিদের স্বীকারোক্তি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকার মৃত হাজী আলেক চান বেপারীর ছেলে। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চাঁদ ডায়িং ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
আদালতে জবানবন্দি প্রদান করা রুমা আক্তার ময়মনসিংহের গৌরিপুরের তাতরাকান্দা গ্রামের নজর আলীর মেয়ে। আর তার বান্ধবী রোকসানা ওরফে রুকু ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ার কানিকশালগাঁও গ্রামের মৃত আবদুল হকের মেয়ে। জবানবন্দি দেওয়া দু’জনই ঢাকার শেওড়াপাড়া এলাকার ডা. হাবিবুল্লাহর বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রোকনুজ্জামান বলেন, গ্রেফতাররা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে শুক্রবার তাদের আদালতে আনা হয়। এরপর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তবে তারা জবানবন্দিতে কি বলেছেন তা তার জানা নেই। জবানবন্দির কপি হাতে পেলে বলতে পারবেন। তদন্ত কর্মকর্তা আরও দাবি করেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তদন্তে আরও অনেক কিছু জানার বাকি রয়েছে।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের একটি লেক থেকে জসিম উদ্দিন মাসুমের খন্ডিত ৭ টুকরা মরদেহ ৩টি পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন বিকেল ৩ টায় সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, গত ১০ নভেম্বর বিকাল থেকেই জসিম উদ্দিন নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় তার নিখোঁজ হওয়ার একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। গুলশান থানার ওই জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ভুক্তভোগীর পরিচয় জানতে পারি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন, অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। গ্রেফতার রুমার সঙ্গে শিল্পপতি মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর পাশাপাশি এই শিল্পপতি মাসুম অন্য আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এই বিষয়টি জানতে পেরে রুমা রাগে-ক্ষোভে ও আবেগের বর্শবর্তী হয়ে তাকে খুন করেন। গত ১০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মূলত সেখানে একটি ভাড়া বাড়িতে তারা একত্রিত হতো। খুন করার আগে ওই নারী প্রথমে তাকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা ফেলেন। এরপর চাপাতি দিয়ে জবাই করে মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়। সেই টুকরো টুকরো অংশ প্রথমে পাঠাও এবং পরে সিএনজি ভাড়া করে এগুলো বিভিন্ন স্থানে ফেলেন।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় রুমা আক্তারকে ঢাকার শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং সন্দেহভাজন হিসেবে আরও দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা মরদেহের টুকরো ও এই কাজে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি হেসকো ব্লেড এবং ডিস্টিস্টের পরিহিত সাফারি, একজোড়া স্যু উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় রুপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তারও আগে জসিমের মরদেহ শনাক্ত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তির ছেলে ওবায়দুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ছুটে যান। সেখানে জসিমের ছেলে ওবায়দুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত রোববার বিকেলে তাঁর বাবা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গুলশানের বাসা থেকে বের হন। পরে গুলশানে নিজের গাড়িটি ছেড়ে দেন এবং অন্য একটি গাড়ি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যাবেন বলে চালককে জানান। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর বাবা জসিম মুঠোফোনে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রাতে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। পরদিন সকালে তাঁর বাবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তাঁরা গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত বুধবার রাতে খবর পেয়ে মর্গে এসে দাড়ি, নখ ও কিছু চিহ্ন দেখে তার বাবার মরদেহ শনাক্ত করেন।