সোনারগাঁও উপজেলায় আত্মীয়দের সঙ্গে জমির বিরোধে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সোনারগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে হামলার ঘটনা লামিয়া চৌধুরী লাইভ করেন।
লাইভে দেখা যায়, লামিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। ভিডিওতে লামিয়া বলছিলেন, তার পা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি হাঁটতে পারছেন না। তার গাড়িও ভাঙা হয়েছে।
যদিও পাল্টা অভিযোগ করেছেন লামিয়ার প্রয়াত ছোটমামা টিপু সুলতানের স্ত্রী লায়লা লুৎফুন্নাহার শারমিন প্রীতি। তার দাবি, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারে লোকজন নিয়ে এসে তার ওপর হামলা চালিয়েছেন লামিয়া।
স্থানীয়রা জানান, লামিয়ার মামা টিপু সুলতান অন্তত ৯ বছর আগে মারা গেছেন। তবে তার পরিবারের সঙ্গে লামিয়াদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) বিচার-সালিশ বসানো হয়। ওই সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষই হাতাহাতিতে জড়ান। তখন লামিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সালিশে লামিয়ার পক্ষের লোকজনও ছিলেন। তার সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজনও ছিলেন।
অন্যদিকে, তার মামা টিপু সুলতানের স্ত্রী প্রীতি স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাকে তার পক্ষে ডেকে নিয়ে আসেন। বিএনপির লোকজনও লামিয়ার ওপর হামলায় অংশ নেন। তারা সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের অনুসারী। মোশারফ নিজেও ঘটনাস্থলে ছিলেন।
এ বিষয়ে মোশারফ হোসেন বলেন, “লোকজন শুনেছে, শেখ হাসিনার আত্মীয় শেখ মারুফ নাকি লামিয়ার সঙ্গে আসছে। এ খবর পেয়ে কিছু লোকজন সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু তারা পরে মারুফকে পায়নি। আমার লোকজন কোনো হামলার সঙ্গে জড়িত না। মহিলারা-মহিলারা এইটা করছে। আর আমিও গিয়েছি ঘটনার অনেক পরে।” “লামিয়া লোকজন নিয়ে তার মামীকে মারধরও করেছে, এ খবর পাওয়ার পর, আমার বাড়ি যেহেতু পাশেই, তাই গিয়েছিলাম।”
এ বিষয়ে প্রীতি বলেন, “আমার স্বামী মারা গেছে ৯ বছর আগে। তার নামে ৩৮ শতাংশ জমি আছে। আমি আমার দুই সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস করি। আমার একটা ছেলে অটিস্টিক। আমার স্বামীর জমি দখল করতে চায় লামিয়ারা। এ নিয়ে সালিশ বসলে লামিয়া ঢাকা থেকে লোকজন নিয়ে এসে আমার ওপর হামলা চালায়।” আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন বলেও দাবি করেন প্রীতি।
তবে লামিয়া সাংবাদিকদেরকে বলেন, “সন্ত্রাসীরা আমার ওপর হামলা চালায়। তারা প্রায় ৩০-৪০ জন ছিলেন। তারা আমার গায়ে হাত দিয়েছে, ওড়না টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। সেখান থেকে কোনো রকম বের হওয়ার চেষ্টা করলে তারা আমার পায়ে আঘাত করে, গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়ে।” তারা “গাড়ির গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। আমি রেকর্ড করছিলাম বলে ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। আমার মায়ের সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছে। আমার খালামনিুকে তালাবদ্ধ করে রেখেছে।”
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান বলেন, “মামাদের সঙ্গে লামিয়াদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। ওই বিষয়ে আজ একটি সালিশও বসছিল, তখন উত্তেজনা তৈরি হয়। তখন লামিয়ার গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি নিজেদের মধ্যেই হয়েছে।” “বিষয়টি আমরা জেনেছি। কিন্তু লামিয়া এ ঘটনার পরপরই ঢাকায় চলে গেছেন বলে জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।” এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই এ ঘটনায় লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি জানান তিনি।