নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, হাসিনা সরকার দেশের মধ্যে দুর্নীতির এমন এক ঐতিহাসিক অধ্যায় রচনা করেছে যা ইতিপূর্বে কোন সরকার এত বেশী দুর্নীতি করতে পারে নাই। ব্যাংকগুলোকে সম্পূর্ণভাবে লুটে নিয়েছে। সমস্ত রাষ্ট্রীয়, প্রশাসনিক যে অর্থ সম্পদ ছিলো, সেগুলোকে তারা লুট করে নিয়েছে। লুট করে তারা সব বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা এ দেশ থেকে লুণ্ঠন করে তারা বিদেশে সেই টাকা পাচার করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ভঙ্গুর করে দিয়ে গেছে। নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি তৈয়ব হোসেনের সভাপতিত্বি অনুষ্ঠিত এক জনসভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম জুয়েল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভপতি মাজেদুল ইসলাম, সহ- সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক ও নাসিক ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা মেম্বার ও এস এম আসলাম প্রমুখ।
গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, হাসিনার সরকার গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রশাসনিক যে কাঠামো ছিলো, প্রতিষ্ঠান ছিলো সেগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। এই দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। ১৪ সালে, ১৮ সালে এবং ২৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছে আপনারা জানেন, ভোটার বিহীন নির্বাচন হয়েছে। জনগন ভোটের অধিকার রাখে, ভোটের মালিক জনগন। জনগন এ তিনটি নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নাই। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রাতের ভোট দিনে, দিনের ভোট রাতে এবং ডামি নির্বাচন করে নিজেদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলো। এ ক্ষমতা দখলের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিলো। আপনারা জানেন, স্বৈরাচারী শাসক প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনাকে হরণ করে নিয়েছিলো। বিচারবিভাগ বিচরালায়ের মধ্যে কোন দিন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। শাসকেরা হুকুম দিয়েছে, আর বিচারকরা সেই হুকুম শুনে অন্যায় রায় দিয়েছে। এদেশের মানুষ বিচারালয় থেকে কোন ন্যায় বিচার পায় নাই। বিচার ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সুদীর্ঘ ১৬ বছর স্বৈরাচারী, ফ্যসিস্ট হাসিনার সরকারের সময় অনেক অন্যায় অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। অনেক অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে। অনেক হত্যা, গুম হয়েছে। অনেক মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমার কারণে অনেকেই জেল খেটেছে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছাড়া ছিলো। এক পর্যায়ে সেই আমাদেরই সন্তান, এদেশের ছাত্র সমাজ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যখন করছিলো, তখন এ দেশের মুক্তিকামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দ এবং সমর্থকসহ সকল শ্রেণীর সাধারণ মানুষ এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো। স্বৈরাচারী সরকার সেদিন দিশেহারা হয়ে এদেশের পুলিশ বাহিনীকে, সশস্ত্র বাহিনীকে মানুষের উপর গুলি চালানোর নির্দেশনা দিয়েছিলো। এই সানারপাড়েই অনেকেই প্রাণ হারিয়েছিলো আন্দোলন-সংগ্রামে গিয়ে। যারা রক্তদিয়ে আমাদেরকে মুক্ত করে গেছে, এই সভায় দাঁড়িয়ে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছিলেন আপনারা আন্দোলন সংগ্রাম করে ত্যাগের মাধ্যমে। ৫ আগষ্টের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দাম্ভিক, অহমিকাপূর্ণ্য, স্বৈরাশাসক, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হল। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেল, আর তার দোসর যারা ছিলো, তারা ক্ষমতার দম্ভে সেদিন নিজেদেরকে অনেক বড় ভাবতো। নির্যাতন করে মানুষকে অবজ্ঞা করে মানুষকে গালমন্দ করে আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করতো তারাও শেখ হাসিনার সাথে সাথে পালিয়ে যেতে শুরু করলো, আত্মগোপনে চলে গেল। আজকে মানুষ নতুন বিজয় লাভ করে ৫ তারিখের পর থেকে মুক্তআকাশের নীচে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলে চলতে পারে। আজকে তারা মতামত প্রকাশ করার মাধ্যমে নিজেদেরকে একজন নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিতে পারে।
গিয়াউদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে, পাকিস্থানি শাসক জনতার বিরুদ্ধে। এর মূল লক্ষ্যই ছিলো, যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবো। যারা ন্যায় বিচারকে ধ্বংস করে দিয়েছিলো, সেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবো। যারা মানুষের মৌলিক অধিকারকে হনন করে দিয়েছিলো- আমরা সেই মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনবো। যারা শোষণ করে বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্থানের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিলো, আমরা সেই অর্থনৈতিক বৈষম্যকে দূর করে শোষণবিহীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম।