নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মুহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘গিয়াসউদ্দিন এবং শামীম ওসমান একই সূত্রে গাঁথা। একজন প্রকাশ্যে খুন করায়, আরেকজন গোপনে খুনের মামলা দেয়। এরা দু’জনই গডফাদার’। ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় থানা বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালি পূর্ব সমাবেশে এসব অভিযোগ তোলেন তিনি।
এছাড়া সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের ‘বাপ ডাকিয়ে দেবো’ ও ‘ফতুল্লা প্রেস ক্লাব তোমরা সোজা হয়ে যাও’ বলে গিয়াস উদ্দিনের এমন হুমকি দেয়ার বিষয় উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দাও জানান ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মুহাম্মদ চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতারা।
র্যালির আগে ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মিথ্যা মামলা দিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি ও আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মুহাম্মদ চৌধুরী। একই সঙ্গে এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে গিয়াস উদ্দিনকে চ্যালেঞ্জও করেছেন তিনি।
সমাবেশ শেষে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মুহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ফতুল্লার ডিআইটি মাঠ থেকে বিশাল আকৃতির দলীয় পতাকা ও জিয়াউর রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে র্যালি বের করেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। পরে নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা সড়কের একাংশ প্রদক্ষিণ করে পঞ্চবটি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে র্যালিটি শেষ হয়। ফতুল্লা থানার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে দলে দলে এসে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।
গিয়াস উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে রিয়াদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনি মনে প্রাণে শেখ মুজিবের আদর্শ লালন করেন বলেই আপনি ১৫ আগস্ট পালন করেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পর মিষ্টি বিতরণ করেছেন, আপনার পরিবারের সদস্যরা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এসব করে আপনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। আর এখন বাঘ সেজে হুংকার দিচ্ছেন। বাঘ সাজতে চান তাতে সমস্যা নাই, কিন্তু এই বাঘকে আমরা ভয় পাই না। আমার প্রশ্ন ৫ আগস্টের আগে আপনি কোথায় ছিলেন? তখন কেন বাঘ সাজেননি? আন্দোলন করতে গিয়ে যে গুলি শহিদুল ইসলাম টিটু খেয়েছে তা আপনার খাওয়ার কথা, তখন আপনি কোথায় ছিলেন?’
জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের রাজনৈতিক নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে রিয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের ১৭ দিন আগে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে এসে এমপি হয়ে আপনি বিএনপির ত্যাগী, নিবেদিত নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন চালিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর আন্দোলনের বাইরে ছিলেন। আপনাকে ফতুল্লা বিএনপি সমর্থন দিয়ে আলোচনায় এনে জেলা বিএনপির সভাপতির জায়গায় বসানো হয়েছে। আপনি এ পদে এসেই আগের মতো বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছেন। যারা আওয়ামী লীগের আদর্শ লালন করে তারা বিএনপির ত্যাগীদের সহ্য করতে পারবে না এটাই প্রমাণিত। দীর্ঘদিন ত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি আজ এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সে অর্জনকে একটি পক্ষ ধূলিসাৎ করার চেষ্টা করছে’।
গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ তুলে রিয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘গিয়াস সাহেব আপনি ৫ আগস্টের পর বহিঃষ্কার খেলায় লিপ্ত হয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জে কোথায় কার মার্কেট দখল করেছেন, লুটপাট কি করেছেন সব আমরা জানি, আপনি এর দায় এড়াতে পারবেন না। আমাদের হুমকি দিয়ে লাভ নাই। শামীম ওসমানের মতো গডফাদারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আমরা রাজনীতি করেছি। সেই শামীম ওসমান পালিয়েছে। আর আপনি এসে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন। এসব করে আপনি বিএনপিকে বিতর্কিত করতে যা যা করণীয় আপনি সব করছেন।
গিয়াস উদ্দিনকে চ্যালেঞ্জ করে রিয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আপনার পরিবার কি অপরাধ করেছে আর আমরা কি অপরাধ করেছি, একটি মঞ্চ করে বসেন। প্রমাণ হয়ে যাবে ফতুল্লায় কি হয়েছে আর সিদ্ধিরগঞ্জে কি হয়েছে? তখনই বুঝা যাবে কে কি দখল করেছে। কে কতোটুকু অন্যায় করেছে। আপনি প্রতিদিন অন্যায় করছেন আর সভামঞ্চে বসে পরের সমালোচনা করছেন। পরের অন্যায়ের কথা আর কতোদিন বলবেন। আপনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা বলে বিএনপিকে আর বিতর্কিত করবেন না’।
সমাবেশে গিয়াস উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘যারা মাঠে ছিল না, যারা ২০০১ সালে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি করেছে, এখন তাদের শেল্টার দিচ্ছেন। আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। আমরা তৃণমূল থেকে উঠে আশা কর্মী। আমাদের হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। যারা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন আপনার আন্দোলনের সময় কোথায় ছিলেন। বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করুন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শাহ আলম, থানা যুব দলের সদস্য সচিব সালাউদ্দিন সালু, ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন, ফতুল্লা থানা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুল খালেক টিপু, ফতুল্লা থানা বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বাবুল আহমেদ, বক্তাবলী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সুমন আকবর, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার ও ফতুল্লা থানা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সাগর সিদ্দিকী প্রমুখ।