সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রীর নামে ‘আহম্মদ সেন্টার’ নামে একটি মার্কেট দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা আইয়ুব আলী মুন্সির বিরুদ্ধে। মার্কেটটি দখলের পর নাম পরিবর্তন করে আইয়ুব আলী মুন্সির মৃত স্ত্রীর নামে ‘সুফিয়া সুপার মার্কেট’ নামকরণ করা হয়েছে। মার্কেটের একটি দোকানকে বানিয়েছেন নিজের ব্যক্তিগত অফিস।
এদিকে মার্কেট দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে মার্কেটের জায়গা নিজের বলে দাবি করেন অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আইয়ুব আলী মুন্সি। তিনি নাসিক ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং শিমরাইল টেকপাড়া এলাকার মৃত রহমান আলীর ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় জেএমএস গ্লাস ফ্যাক্টরির মালিক সামছুদ্দিন আহম্মদ এর সোয়া ১১ শতাংশ জমির মধ্যে নির্মিত ‘আহম্মদ সেন্টার’ মার্কেটের মালিক। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে আইয়ুব আলী মুন্সি দলবল নিয়ে মার্কেটটি দখল করেন। এ ঘটনায় আইয়ুব আলী মুন্সিকে প্রধান করে ৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে গত ১৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মার্কেটের কেয়ারটেকার আশরাফুল ইসলাম।
ওই মার্কেটের ইঞ্জিন ম্যাকানিক খলিলুর রহমান বলেন, আমি এই মার্কেট তোলা অবস্থা থেকে এখানে আছি। এই মার্কেট যখন তোলে অ্যাডভান্স দিয়ে কাগজ-পাতি করে দোকানদারি করতে থাকি। ৫ আগস্টের গ্যাঞ্জামের (অভুত্থানের) পর মার্কেট দখল করেছে আইয়ুব আলীর লোকজন। তার বাহিনী অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে মার্কেট দখল করে। তারপর বলছে সামছুদ্দিন সাহেবকে ভাড়া দিতে পারবেন না, ভাড়া আমাদেরকে দিতে হবে। আমরা তাদেরকে ভাড়া দিতে না চাইলে তাদের অফিসে নিয়ে আমাদেরকে বলে- যারা ভাড়া আর অ্যাডভান্স না দিবেন তারা মার্কেট ছেড়ে চলে যাবেন। সময়ও দেয়নি। একটা সরকারি আইন থাকে ৩ মাস সময় দেয়। আমাকে ১ মাস সময়ও দেয় নাই। নিয়ম অনুযায়ী ৩ মাসের সময় দেয়ার কথা। আমি অ্যাডভান্স দিবো না দেখে আমাকে দোকান থেকে বের করে দিসে। একবার তো অ্যাডভান্স দিয়ে দোকান ভাড়া নিসি আর কয়বার দিবো।
ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কশপের মালিক প্রদীপ বলেন, আমি ২০১১ সালে থেকে এই মার্কেটে ব্যবসা করি। ৫ আগস্টের পর থেকে আইয়ুব আলী মুন্সি লোকজন নিয়ে এসে বলছে মার্কেটের মালিক আমি। আজকে থেকে এই মার্কেটের ভাড়া আমাকে দিবেন। সামছুদ্দিনকে আপনারা কোন ভাড়া দিতে পারবেন না। এরপর আবার মার্কেটের সব দোকানদারদের মিটিংয়ে ডেকে একই কথা বলছে। আমাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা যেন তার (আইয়ুব আলী মুন্সি) কাছে নতুন করে অ্যাডভান্স দিয়ে ডিড করি।
মায়ের দোয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এর মালিক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ৩টা দোকান নিয়ে এই মার্কেটে আমি দোকান শুরু করেছিলাম। এর মধ্যে একটা দোকানে আমার কয়েকটা মেশিন রাখা ছিলো। এই দোকান দখল করে একপাশে আইয়ুব আলীর লোকজন অফিস উঠাইসে আর একপাশে আমার মেশিনগুলা সরিয়ে রাখছে। আগে ভাড়া উঠাইতো সামছুদ্দিন সাহেবের লোকজন। এখন ভাড়া উঠায় আইয়ুব আলীর লোকজন। ৫ আগস্টের পর তার লোকজন বলতেসে তারা খরিদ সূত্রে মালিক। আমরাতো ভাড়াটিয়া, আমরা প্রকৃত বিষয়টা জানিনা। আমরা এর আগে সামছুদ্দিন সাহেবকে অ্যাডভান্স দিসি ভাড়া দিসি। আইয়ুব আলীর লোকজন আবার নতুন করে অ্যাডভান্স নিসে। কারণ না হলে আমরা এখানে থাকতে পারতাসি না। আমরাতো এখানে ব্যবসা করতে আসছি। এত ঝামেলাতো জানি না।
আহাম্মেদ সেন্টার মার্কেটের ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, এই মার্কেটের মালিক সামসুদ্দিন আহমেদ। আমি প্রায় ১৬ বছর ধরে এই মার্কেটের ভাড়া উঠাই। কিন্তু পাঁচ আগস্টের পরে বিএনপি নামধারী কিছু লোক জোর জবরদস্তি করে ভাড়াটিয়দের মারধর করে বলতেছে ভাড়া তাদের দিতে হবে। এরপর আমি আর মার্কেটে যেতে পারি নাই। আইয়ুব আলীর ছেলে সাইফুল, ওলি, আলিসহ আরও কিছু লোক মিলে মার্কেটের লোকদের ভয়ভীতি দেখায়। তাদেরকে ভাড়া দিতে বলে। এ ভাবে ভাড়া নিচ্ছে এবং দোকানদারের কাছ থেকে অ্যাডভান্স হিসেবে ৫০ হাজার ১ লাখ টাকা করে নিচ্ছে। আমরা আইনের আশ্রয় চাইতে থানায় গিয়ে কোন সহযোগিতা পাইনি। পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও কোন সুরাহা পাইনি। এই জায়গা নিয়ে মামলা হলে ২০২৩ সালে আমাদের পক্ষে রায় হয়। আমাদের কাছে রায়ের কাগজ আছে।
অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে আইয়ুব আলী মুন্সি বলেন, এটা আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তি। ২০০৯ সালে তারা আমার কাছ থেকে দখল করে নেয়। এখন আমার জায়গা আমি দখল করে নিয়েছি। এই জায়গা নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। মামলাটা কোর্ট থেকে খারিজ করে দেয়ার পর আমি আবার আপিল করেছি। এখন মামলা চলমান।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অ্যাডভান্স নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মার্কেট আমি টাকা তুলবো। তাতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা না। যারা টাকা দিবে তারা থাকবে যারা দিবে না তারা থাকবে না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, এমন কোন অভিযোগ আমি পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।