বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

ফতুল্লায় মসজিদের ইমামকে রাজকীয় বিদায়

ফতুল্লা প্রতিনিধি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৫৩ Time View

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এক মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির নেতারা। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকার মসজিদে এক যুগ ধরে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করায় মুফতি ইয়াসিন আকরাম চৌধুরী নবীনগরীকে এই বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পর অনুষ্ঠিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন মুসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য কাজী মাঈন উদ্দিন, প্রধান আলোচক হিসেবে ৫নং কলোনি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি ইয়াহইয়া হাসান, বিশেষ আলোচক বাইতুল হাফিজ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি আল আমিন শেখ, জামিয়া করীমিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা রেজাউল করীমসহ (নওমুসলিম) আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নানা উপহার দিয়ে মুসল্লিরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে বিদায় দিয়েছেন।

বিদায়ী ইমাম মুফতি ইয়াসিন আকরাম চৌধুরী নবীনগরী বলেন, ২০১২ সালে এই মসজিদে যোগদান করেছি। আজকে প্রায় এক যুগ হয়েছে। আমি কোরআনের পক্ষে আল্লাহর কথা বলে মানুষের হৃদয় জয় করেছি। মূলত আল্লাহর কথা শুনে মানুষ আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। আজ তারা আমাকে পৃথিবীর শেষ্ঠ উপহার ‘ভালোবাসা’ দিয়ে বিদায় দিয়েছে। ভালোবাসার চেয়ে দামি উপহার আমি মনে করে আর কিছু নেই। আসলে এই বিদায়টা তারাও চাচ্ছিল না, আমিও চাইনি। তারপরেও আমার দ্বীনি কিছু কাজের কারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার প্রতিষ্ঠিত দুটি মাদ্রসা আমার মাধ্যমে পরিচালতি হয়। বাংলাদেশ তথা দেশের বাইরেও বিভিন্ন মাহফিলে অংশগ্রহণ করে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছি। বেশ কিছু দ্বীনি সংগঠনে আমি আছি। সেই কাজগুলো বাংলাদেশ তথা মুসলিম উম্মাহর জন্য করতে হয়। এরুপ বেশ কিছু দ্বীনি কাজের ফলে আমি সবার কাছে দোয়া নিয়ে বিদায় নিয়েছি। আর আমি যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলামের খেদমত করে যেতে পারি সেই দোয়া সবাই করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমাকে যেভাবে বিদায় দেওয়া হয়েছে সেই ভালো লাগার বিষয়টি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নারায়ণগঞ্জ জেলায় এমন কোনো বিদায় সংবর্ধনা হয়েছে কি না আমার চোখে পড়েনি। লালপুরবাসী ও লালপুর পৌষার পুকুরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুসল্লিসহ নেতারা আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে বাংলাদেশে এক নজির সৃষ্টি করেছে। পবিত্র কোরআনের জন্য মানুষ এই ধরনের ভালোবাসা পেতে পারে আজকে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মানুষ যদি কোরআনের ধারক-বাহক হয় কোরআনের সেবক হয় তাহলে সহজেই মানুষের হৃদয়ে স্থান পেয়ে যায়।

বিদায়ী ইমামকে শিক্ষক হিসেবে সম্মান দেখিয়ে লালপুর পৌষার পুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও লালপুর পৌষার পুকুরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সহসভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন মুসা বলেন, উনি একজন আলেম না উনি আমাদের কাছে একজন শিক্ষক। সহীহ-শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আমলের শিক্ষা তিনি দিয়েছেন। কীভাবে ইসলামিক জীবনযাপন করতে হয় এগুলো শিখিয়েছেন। এভাবে ইসলামের সঠিক পথ উনি আমাদের দেখিয়েছেন। এ কারণে অত্র এলাকার জনগণের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এলাকার সব শ্রেণির মানুষ তাকে ভালোবেসে আপন করে নিয়েছেন। তবে তিনি যখন চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই তাকে জমকালো একটি বিদায় সংবর্ধনা দেওয়ার।

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় মুসল্লি মুহাম্মদ আল আমিন শেখ বলেন, তিনি আমাদের এলাকার এই মসজিদে এক যুগ সময় ধরে ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন। উনি তাফসিরের আঙ্গিকে কোরআন ও হাদিস থেকে জুমার বয়ানে আলোচনা করে থাকেন। ওনার আলোচনা শোনার জন্য বহু দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এই মসজিদে চলে আসে। ঘরের ভেতরে মহিলারা ওনার বয়ান শোনার জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে অপেক্ষা করত। কারণ ওনার বয়ান থেকে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারত। ওনার বয়ান শুনে অনেক মুসলমান ইসলামের প্রতি আরও আগ্রহী হয়েছেন। আজকে ওনার বিদায়, এ কারণে আমাদের কাছে বেদনার হয়ে আছে। তবে তিনি আমাদের এই এলাকায় দুটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, ফলে তিনি আমাদের মাঝেই থাকছেন। এটা ভেবে ভালো লাগছে।

বিদায় সংবর্ধনার আলোচনা সভা শেষে ফুল দিয়ে সজ্জিত গাড়িতে করে বিদায়ী ইমাম ও মুফতি ইয়াসিন আকরাম চৌধুরী নবীনগরীকে মসজিদ থেকে লালপুরের চৌধুরী বাজার এলাকায় নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন মুসল্লিরা। এ সময় তাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মুসল্লিরা তার গাড়ির সঙ্গে হেঁটে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
Translate »