সেভেন মার্ডারের পর থেকে এ পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে পরিবহন থেকে চাঁদা উত্তোলন করা সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ পরিবহন চাঁদাবাজ দেলোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। একটি অপহরণ মামলায় পলাতক থাকার পর বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী (১নং) আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। দেলোয়ার হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শিমরাইল টেকপাড়া এলাকার মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক ও শিমরাইল শাখার সভাপতি। সেভেন মার্ডারের পর শিমরাইলের শীর্ষ পরিবহন চাঁদাবাজ এখন দেলোয়ার।
সূত্র জানায়, বন্দরের সোনাচরাবাগ এলাকার ব্যাবসায়ী বকুল আহমেদ (৩৮) ও তাঁর স্ত্রী আরিফা বেগমকে সংঘবদ্ধ বাহিনী নিয়ে সোনারগাঁও থেকে অপহরণ করে ১ মাস আটকে রেখে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবীর মামলার আসামী দেলোয়ার হোসেন পলাতক ছিলেন দীর্ঘদিন। স্বামী-স্ত্রীকে অপহরণের ঘটনায় গত ৬ সেপ্টেম্বর অপহৃত বকুলের মা খোরশেদা বেগম (৬৫) বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। সোনারগাঁও থানার মামলা নং-১১। এ মামলায় দেলোয়ার ৪ নম্বর আসামী। মামলা দায়েরের পরের দিন ৭ সেপ্টেম্বর ভোর সোয়া ৪টায় সোনারগাঁ থানা পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল টেকপাড়া এলাকাস্থ শ্রমিকলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে অপহৃত স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে। এসময় অপহরণের সময় ব্যবহৃত খয়েরি রংয়ের প্রাইভেট কারটি জব্ধ করে পুলিশ। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী মাহমুদুর রহমান রক্সি (৩২), সবুজ (২৫) ও সাইদুল ইসলাম (৩২)কে গ্রেফতার করে। একই দিন দুপুরে সোনারগাঁও থানা পুলিশ উক্ত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত শুনানী শেষে আসামীদেরকে একদিন জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। মামলার অপর দুই আসামী শাহজাহান (৪৪) ও মানিক (৪৫) পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামী দেলোয়ার হোসেনের জমি সংক্রান্ত প্রাপ্ত টাকা দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৮ আগষ্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় মামলার এজাহার নামীয় আসামীরাসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের একটি বাহিনী নিয়ে সোনারগাঁও থানাধীন শুকরদী এলাকাস্থ পাঁচ পীরের দরগাহ মসজিদের সামনে থেকে মো: বকুল আহমেদকে খয়েরি রংয়ের একটি প্রাইভেটকার যোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে দেলোয়ার হোসেন অপহৃতের স্ত্রী আরিফা বেগমকে ফোন করে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৫ আগষ্ট বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৩টায় অপহৃতের স্ত্রী সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকাস্থ রহমান মার্কেটের পাশে মদিনা সিমেন্টের দোকানে আসামী দেলোয়ার হোসেনের সাথে দেখা করতে আসে। এসময় দেলোয়ার হোসেনের গোডাউনে বাদিনীর পুত্রবধু আরিফা বেগম তাঁর স্বামী বকুল আহমেদকে দেখে ডাক চিৎকার করে। এতে দেলোয়ার হোসেন সহ অপরাপর আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীকে আটকে রেখে তাদের কাছ থেকে একটি দলিল ও একাধিক ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখে। বাদিনীর ছেলের স্ত্রী আরিফা বেগমের গ্রামীণ ব্যাংকের একাউন্ট হতে মুক্তিপন বাবদ নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৩ লাখ টাকার চেক সহ একাধিক ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর রাখে এবং দেলোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে তাদেরকে আটকে রাখে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ভোর সোয়া ৪টায় দিকে সিদ্ধিরগঞ্জে আসামী দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে অপহৃতদের পুলিশ উদ্ধার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমানে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত করছে।