পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিলাসবহুল বাংলো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুন আদালত তৃতীয় দফায় বেনজীরের আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছেন। সে তালিকায় এ বাংলোটিও রয়েছে। এরপর বাড়িটি দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ দেন আদালত। বাংলোটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। আদালতের নির্দেশে শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বয়ে গঠিত টিম রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিং সোসাইটি এলাকার এই বাড়িটি জব্দ করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম, দুদকের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রউশনী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও আহসান মাহমুদ রাসেল ও সহকারী কমিশনার ভূমি সিমন সরকারসহ আরো অনেকে।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জর্জ আদালত কতৃক বেনজির আহম্মেদের মেয়ের নামের সম্পত্তিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে রক্ষণাবেক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সম্পত্তিটি নিয়ন্ত্রণে নিলাম। আমাদের নির্ধারিত কমিটিধারা কর্মপন্থা নির্ধারণ করবো।
নারায়ণগঞ্জ দুদক আঞ্চলিক পরিচালক মইনুল হাসান রওসানী বলেন, বাড়িটিতে অত্যাধুনিক তালাবদ্ধ থাকায় তাৎক্ষণিক ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। তবে একটি কমিটি করে স্থানীয় ইউপি সদস্যে মোরশেদ আলমের হেফাজতে আগামী ৩ দিনের জন্য রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে এর ভিতরে থাকা মালামালসহ সবকিছু জব্দ তালিকা করবো।
জানা গেছে, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশের নানাস্থানে অবৈধ স্থাপনা গড়েছেন। বাদ যায়নি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দক্ষিণবাগ চোরাবো মোড়ের ডুপ্লেক্স বাড়িও। আনন্দ হাউজিং নামীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের গড়া আবাসন কোম্পানিতে ২৪ কাঠা জমিতে গড়ে তুলেছেন আলিসান বাড়ি। যেখানে সাধারণের প্রবেশ রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বেনজির যেদিন আসতেন এ বাড়িতে আর যতক্ষণ অবস্থান করতেন বন্ধ রাখা হতো এখানকার রাস্তা। পুলিশের পাহাড়ায় এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরী করতেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ৮ বছর আগে এলাকার প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় ৫৫ শতাংশ জায়গা কেনেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। চার বছর পূর্বে এই জমিতে ওই বাড়ি করেন তিনি। তাঁর ওই বাড়ি ঘিরে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা গল্প, রহস্য।
অভিযোগ রয়েছে, একটি জাতীয় দৈনিকে বেনজিরের আলাদিনের চেরাগ নামে সংবাদ প্রকাশের পর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ ভেতরে থাকা মালামাল সরিয়ে ফেলেছেন। প্রায় সময়ই পুলিশের সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির বহর নিয়ে বাড়িতে আসতেন বেনজীর। পুলিশের নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে তখন বাড়ির পাশের সড়ক দিয়ে লোকজনের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হতো।