নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়র ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ের ফুটপাত থেকে চাঁদা উত্তোলনের গরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরীহ হকাররা বলছেন, নাসিক কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম ও তার সহযোগীদের চাঁদার টাকা না দিলে তাদেও সাথে অসালীন আচরণ করে চাঁদাবাজরা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশের সমন্বয়ে ফুটপাত অবৈধ দখলদার থেকে মুক্ত করা হলেও আবারো হকারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ফুটপাত দখলে নিয়েছেন কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারো আগের রূপে ফিরেছে। দোকানিরা ফুটপাতজুড়ে হরেক রকমের দোকান দিয়ে বসে পড়েছেন। ফল, জুতা, মোবাইলের যন্ত্রাংশ, বাচ্চাদের প্যান্ট-শার্টসহ বিভিন্ন দোকান দিয়ে বসেছেন। এতে করে সাধারণ মানুষের চলাচলে আবারো বিঘ্ন ঘটছে। এমনকি ফুটওভার ব্রিজে বসা হকারদের কাছ থেকেও চাঁদা নিচ্ছেন তারা।
হকাররা জানান, পুনরায় ফুটপাতে দোকান বসাতে প্রতি দোকানদারকে গুনতে হয়েছে এককালীন বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা। আর চাঁদার হারও বেড়েছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। আগে যারা প্রতিদিন ২০০ টাকা চাঁদা দিতো, এটা এখন স্থান ও প্রসস্থতা অনুপাতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানি জানিয়েছেন, দোকানিদের টাকা নেওয়ার কথা ভুলেও যেন কাউকে না বলি- এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কাউন্সিলরের অন্যতম সহযোগী মাসুদ রানা, সাদ্দাম, নাঈমসহ তিন-চারজনের একটি সিন্ডিকেট। যদি কেউ চাঁদাবাাজীর কথা সাংবাদিক বা পুলিশদের বলে তাহলে তার দোকান শিমরাইল ফুটপাথে বসতে দেবে না বলে হুমকি দেয় মাসুদ রানা, সাদ্দাম ও নাঈমসহ চাঁদাবাজদের ঐ সিন্ডিকেট।
শিমরাইল মোড়ের এক ব্যবসায়ী জানান, চাঁদাবাজ চক্রটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ডিবি পুলিশের নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করছে। ধার্যকৃত হারে চাঁদা না দিলে দোকান বসতে দেবে না তারা।
মাসুদ রানা ও তার ঐ সহযোগীরা এর আগেও কয়েকবার চাঁদা উত্তোলন করেছিলো। চাঁদার টাকা দিতে দেরি হলেই আমাদের ওপর চাঁদাবাজরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এই চাঁদাবাজদের মধ্যে জামাল হোসেন ও তার সহযোগীরা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও মাসুদ রানা এবং তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার হয়নি।
ভুক্তভোগী এক পথচারী জানান, পুরো ফুটপাতই অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন হকাররা। ঠিকমতো হাঁটাচলা করা যায় না। ফুটওভার ব্রিজেও হকার বসেছেন। এভাবে কি চলা যায় বলুন! গেল ক’মাস ভালোই ছিলাম। এখন আবারো চলাফেরা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ফুটপাত থেকে প্রকাশ্যে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছে একটি চক্র। তাদের কেউ কিছুই করতে পারছেন না।
এলাকাবাসী বলছেন, কিছুদিন পর পরই ফুটপাতের দোকানিদের উচ্ছেদ করে দেওয়া হচ্ছে। আবারো ফের দোকান বসাতে প্রত্যেক দোকানির কাছ থেকে ১০-৫০ হাজার করে টাকা নিচ্ছে একটি চাঁদাবাজ গ্রুপ। এই চাঁদাবাজ গ্রুপ প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে টাকাগুলো তুলছেন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এসকল চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় এনে শায়েস্তা করা। তাহলে ফুটপাতে সাধারণ গরীব, হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা।
ফুটপাতে অবৈধ দোকান থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম জানান, সওজের জায়গায় অসহায়, গরীব ও নিরীহ লোকদের কথা বিবেচনা করে তাদের বসিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে তাদের উঠিয়ে দেয়। এতে দোকানিরা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারছেন না। তাদের জন্য স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা করতে পারলে অনেক উপকার হতো। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারতো।
শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের ট্রফিক পুলিশের ইনচার্জ শরফুদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে জানান, আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই হকারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের নাম ভাঙিয়ে দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।