নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংসদ একেএম শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের এক কর্মী সভায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাদেরকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন ওরা (বিএনপি) বলে পুলিশ ছাড়া মাঠে আসতে। আমি পুলিশের কাছে অনুরোধ করছি সব পুলিশ প্রশাসন ওদের (বিএনপি) পক্ষে থাকেন। চব্বিশ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করবো।
এমপি শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতারা।
জবাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ক্ষমতা থাকলে কত কথাই বলা যায়। বিএনপি ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে কিন্তু কেউ পালিয়ে যায়নি। বরং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশের বীর জননেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক শক্তিশালী ও উজ্জীবিত হয়েছে।
দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলা -মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে উপেক্ষা করে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সুতরাং উল্টাপাল্টা কথা বলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, জনবিচ্ছিন্ন অবৈধ সরকারের রাতের ভোটের এমপিদের হুমকি-ধামকি বিএনপির নেতাকর্মীরা ভয় পায় না। সময় আসলেই দেখা যাবে কে থাকবে আর কে পালিয়ে যাবে। সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে এবং থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিরোধী দলকে রাজনীতিভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে এখন তিনি হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। রাজনীতিকে উনি মোকাবেলা করবে রাজনৈতিকভাবে।
নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করে উনি বিরোধীদলকে মোকাবেলা করবে। সেটা না করে তিনি হুমকি দিচ্ছে যে পুলিশ ছাড়াই তিনি বিএনপি নেতা কর্মীদেরকে ২৪ ঘন্টা নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করবে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই। এই যে হুমকি ধামকির কথা বলে জীবনেও সে এটা করতে পারবে না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র সংগঠনের ভিত্তি অন্তত মজবুত। বিএনপির নেতৃবৃন্দ কর্মী ও সমর্থকরা যথেষ্ট পরিমাণে শক্তিশালী। এবং বিএনপির জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগ এখন জন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সেই কারণে দেশের জনগণকে ভয় পেয়ে তাদের কাছ থেকে তাদের নেতাকর্মীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেই কারণে আজকে একেবারে বিদায় লগ্নে এসে উল্টাপাল্টা কথা বলতাছে। তাদের দুর্বল হয়ে যাওয়া নেতা কর্মীদেরকে সবল করার জন্য এসকল বলছে। সে আজ পর্যন্ত কোন কিছু করতে পারেনি এবং করতে পারবেও না।
তিনি আরো বলেন, আমি একটি কথা বলতে পারি দৃঢ়তার সাথে। যদি ১৪ ও ১৮ সালের মতো নির্বাচন না করতে পারে সরকার আর যদি জনগণের ভোটে আগামীতে নির্বাচন হয় তাহলে যে কোন অজুহাত দেখিয়ে শামীম ওসমান নির্বাচনই করবে না।
সে পালিয়ে যাবে নির্বাচন করবেন না যতই বড় বড় কথা বলুন না কেনো। বিএনপি আমরা সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চাই। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কল্যাণে ও উন্নয়নের স্বার্থে আমরা কাজ করতে চাই। এবং জনগণের সেবা দিয়ে জনগণের মন জয় করেই আমরা নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতি করব এবং করতে চাই।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমি মনে করি জন প্রতিনিধিদের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় মার্জিতভাবে বক্তব্য দেওয়া উচিত। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান যে বক্তব্য দিয়েছে আসলে এটি শিষ্টাচার বহির্ভূত। একজন রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া আমি মনে করি ঠিক না।
আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই বলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তারা যা খুশি তাই বলছেন। আজকে যদি গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের বক্তব্য কেউ দিত তাহলে তার বিরুদ্ধে সরকার নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নিতে। কারণ দেশে আইনের শাসন নেই বলেই তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারতাছে।
তিনি আরও বলেন, শামীম ওসমান উনার কাজই হলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি মিডিয়ায় আলোচনায় থাকতে চায়। আমি মনে করি ওইটাও তার একটি সেই ধরনের বক্তব্য। ওনার এই বক্তব্য কিন্তু নারায়ণগঞ্জের জনগণ গ্রহণ করে নাই।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে উনি তার দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করেছেন। আমার মনে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না উনার ভিতরে ভীতু কাজ করছে তার জন্যই তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে সাহস যোগানোর জন্যই ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন? একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকবেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব বলেন, ক্ষমতায় থেকে এরকম বহু কথাই বলা যায়। সময় এলেই বুঝা যাবে কার কতখানি ক্ষমতা। এরকম ১৫বছর ক্ষমতায় থাকলে যে কেউ এধরনের কথা বলতে পারে। কাউকে বের করে বা হঠিয়ে দেয়া এসমস্ত ভন্ড রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসি না। আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসি।
তিনি বলেন, আমরা এদেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জননেতা তারেক রহমান। তারেক রহমানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এদেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূরীকরণে এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে অহিংসতা রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা একমাত্র উদ্দেশ্য।
আমরা এই ধরনের হুমকি- ধামকিতে শুনতে অবস্ত না। আমরা দেশের মানুষের ভোটার প্রতিষ্ঠার সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি , কাজ করে যাবো। কে কি বলল এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এখন বিএনপির নেতাদের নেই।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, ওনি ( শামীম ওসমান ) প্রায়ই বলে খেলা হবে। ওনি যে কি খেলোয়াড় তা আমরা জানি। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও কিন্তু ওনি এমন হুমকি- ধামকি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কিন্তু ওনিই পালিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এখন আবারও তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হুমকি -ধামকি দিচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা কিন্তু উনার এই হুমকি-ধামকিকে ভয় পায় না। সময় ফুরিয়ে এসেছে। আবারও তিনি পালিয়ে যাবেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে এবং রাজপথে থাকবে। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবে না।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান বলেন, নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস তার আছে, আমাদের নেই। গত ১৫ বছর যাবত সরকারের এতো জুলুম নির্যাতন সয়েও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী নারায়ণগঞ্জের রাজপথ ছেড়ে যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবেনা।
এসব উদ্ভট কথা তিনি সব সময়ই বলে থাকেন, তার এসব কথার কোনো মূল্য নেই আমাদের কাছে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফেরানোর এক দফা আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত কোন হুমকি ধামকিই আমাদের গতিরোধ করতে পারবে না। জয় আমাদের সুনিশ্চিত।