শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মাদকের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে যুবক খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎ মিস্ত্রির মর দেহ উদ্ধার গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জের ২২ শহীদ পরিবারকে ৪৪ লাখ টাকা অনুদান সোনারগাঁ ইয়ুথ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টের উদ্বোধন মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেলেন মালিক: বকেয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের স্ত্রী-সন্তানসহ ৩ হ ত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি পুকুর থেকে উদ্ধার আরসা প্রধান আতাউল্লাহ ও ৫ সহযোগী ফের ৮ দিনের রিমাণ্ডে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান মুক্ত কর্মসূচিতে যোগ না দেয়ায় ইপিজেডের ২ কারখানায় ভাং*চুর: আটক ৪৫ ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না: মামুন মাহমুদ

যে কারণে ১১ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৬১ Time View

আভ্যন্তরীন কোন্দল, শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বলয় সৃষ্টির মিশন, নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, পদ বাণিজ্যসহ নানা কারণে ১১ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বরং কমিটি নিয়ে দুই ধারায় বিভক্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা দু’জনেই পৃথক পৃথক ভাবে ৭৫ সদস্যের প্রস্তাবিত পূনাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। এছাড়া দুই কমিটিতে বাদ পড়ার আশঙ্কায় নাসিক মেয়র আলাদাভাবে তার বলয়ের নেতাদেরও একটি তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টিতে নেতানেত্রীদের মধ্যে চরম এক প্রতিযোগিতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা হলে পদবঞ্চিতদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিবে। যার প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে। এ জন্য ঝুলে আছে কমিটি ঘোষণা। এমনটা মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। যদিও বিগত কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের মতে, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জেলার নেতা নির্বাচন করবে। যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, দলে যাদের ত্যাগ আছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এমন নেতাদের কমিটিতে অন্তভুক্ত করা হয়। যাদের পিছনে কর্মী নাই। ‘ওয়ান ম্যান শো’ নেতা হিসেবে তারা পরিচিত। যার কারণে একদিকে দলের সাংগঠনিক ভীত মজবুত হয় না অন্যদিকে দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর সমাগম আশানুরূপ হয় না।

এদিকে শুরু থেকেই টানাপড়ন চলছে সর্বশেষ সম্মেলনে ঘোষিত সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো: বাদলের মধ্যে। নির্দেশনা ছিল তারা সবার সঙ্গে আলোচনা করে জেলা আওয়ামলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিবেন। তারপর কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে সেই কমিটি অনুমোদন দিবেন। কিন্তু তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তৈরীতে একমত হতে পারেননি। ফলে দুই নেতা দিয়ে চলছে জেলা আওয়ামীলীগ।

তাদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলকে শক্তিশালী করার জন্য আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ নেতারা নিজের পছন্দের লোককে কমিটিতে অন্তুর্ভক্ত করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে দুরুত্বের সৃষ্টি করছেন। আর এর প্রভাব পড়ছে তৃণমূলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, দল দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায়। এতে নেতারা আর্থিকভাবে মোটাতাজা হলেও দলের সাংগঠনিক ভীত তলানীতে। তারা অভিযোগ করেন, জেলার শীর্ষ নেতারা পদ বিক্রি করেও টাকা কামিয়েছেন। বিগত কমিটিতে যারা টাকা দিয়ে কমিটিতে ঢুকেছেন তারা দলের কর্মসূচিতেও তেমন একটা ভুমিকা রাখেননি। ফলে জেলা আওয়ামীলীগের কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে হাস্যরসের সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। শুধু তাই নয়, গত ১৫ বছরে রাজনীতির সূতিকাগার নারায়ণগঞ্জ শহরে জেলা আওয়ামীলীগ তাদের ব্যানারে একটি সমাবেশ করতে পারেনি। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

দলীয় তথ্যমতে, দীর্ঘ ২৫ বছর পর গত বছরের ২৩ অক্টোবর ইসদাইর পৌর ওসমান স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ-এর জমজমাট ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সেদিন সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এমপি আগামী তিন বছরের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো আব্দুল হাইকে সভাপতি ও আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আগামী একমাসের মধ্যে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির খসড়া তালিকা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতপ্রার্থক্য ও নানাবিধ সমস্যার কারণে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল পৃথক পৃথক ভাবে ৭৫ সদস্যের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করে তা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন। নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তার বলয়ের নেতাদের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণঞ্জ-১ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুও তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে নিজের বলয়ের লোকদের অন্তভুক্ত করতে। মজার বিষয় হচ্ছে, শীর্ষ নেতাদের বলয় সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় হাইবিট আর সুবিধাভোগী নেতারা নিজেদের জায়গা করে নেয়ার মিশনে রয়েছেন।

ওদিকে পৃথক পৃথকভাবে দুটি কমিটি জমা হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আবার প্রস্তাবিত কমিটিতে যে সকল নেতাদের নাম বাদ পড়েছে বা পড়ার আশংকা রয়েছে তারা দৌড়-ঝাপ করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে। তবে দৌড়-ঝাঁপ যারাই করুক বিতর্কিতদের যেন কমিটিতে ঠাই দেয়া না হয়, এমন দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

এদিকে শামীম ওসমান, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, গাজী গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু, আব্দুল ও আবু হাসনাত বাদলের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে যার যার পছন্দের লোককে কমিটিতে অর্šÍভুক্ত করার। যেমন গত কমিটিতে মেয়র আইভী তার ইচ্ছেমত কমিটিতে তার লোকজনকে স্থান দিয়েছেন। এমন লোককেও তিনি জেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঢুকিয়েছেন যে কিনা পূর্বে আওয়ামীলীগ বা সহযোগি কোন সংগঠনের কোন পদে ছিলেন না। এছাড়া আগের কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই, সিনিয়র সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত বাদল, কার্যকরী সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর মধ্যে মত বিরোধের কারণে ৬টি পদ শূন্য থেকে যায়। এবারও নতুন করে বিরোধ দৃশমান হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কেমন কমিটি হবে, কারা কমিটিতে স্থান পাচ্ছে এ নিয়ে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, গত মার্চ মাসেই আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কেন্দ্র কবে তা অনুমোদন দিবেন তা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। জেলা আওয়ামীলীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো: বাদল জানান, ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবিত একটি কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কিন্তু আব্দুল হাইও তো বললো তিনিও একটা কমিটি জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

দলীয় সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর। অধ্যাপিকা নাজমা রহমান সভাপতি ও এমপি শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এরপর ২০০২ সালের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবরের সিটি নির্বাচনের পর আহ্বায়ক এস এম আকরাম আহবায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ভারপ্রাাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় যুগ্ম-আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামকে। ২০১৪ সালের ১১ ফেরুয়ারিতে মফিজুল ইসলাম মারা যান। এরপর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের তাৎকালীন প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ- সভাপতি ও এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। নানা কারণে সেই কমিটি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। এবার কেন্দ্র কেমন কমিটি ঘোষণা দেয় সেদিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
Translate »