মাদ্রাসা, যেখানে নৈতিক, ধর্মীয় আর দ্বীনি শিক্ষা দেয়া হয়। সে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইমান আমল আখলাক ধর্মীয় আর মানবিক জ্ঞানে নিজেদের আলোকিত করেন। তাদের আচার আচরণও সেরা। কিন্তু সে প্রতিষ্ঠান এমন এক ঘটনা ঘটে তা বনের পশুকেও হার মানায়।
এমনি এক ঘটনা ঘটিয়েছে রূপগঞ্জের ভোলাবো ইউনিয়নের চারিতালুক এলাকার দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের পরিবারের চলাচলের রাস্তা দেয়াল টেনে বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে অবরূদ্ধ হয়ে পরেছেন শিক্ষক পরিবারটি ।
যদিও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দয়া করে লোহার গেইটের তালা খুলে দেন, তখন বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেন তিনি। অন্যথায় রাত্রি যাপন করতে হয় বাইরে কোথাও। এই নিয়ম শুধু রাতের বেলার জন্য নয়।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত মাদ্রাসা গেট বন্ধ থাকলে বাড়িতে আসা যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাদের। তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সময় কাটান তারা। আর অপেক্ষা করেন কখন ৪ টা বাজবে আর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দয়ার হাত প্রসারিত হবে। তারা তালা খুলে দিলেই কেবল মিলবে গৃহে প্রবেশের অনুমতি। এমনই অভিযোগ করেছেন স্কুল শিক্ষক মহসীন মিয়া ও তার পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, ভোলাবোর চারিতালুক দারুল হুদা আলীম মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি বহুপূর্বে প্রতিষ্ঠিত হলেও ৭০ এর দশকে ভোলাবো মৌজার উল্লেখিত জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। সে সময় জায়গাটি এলাকাবাসীর উন্মুক্ত খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তিতে ২০১৪ সালে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে পাকা বাউন্ডারী দেয়াল নির্মাণ করলে শুরু হয় এলাকার মানুষের ভোগান্তি। চারিতালুক মৌজার কৃষকেরা মাদ্রাসার পশ্চিমে বপন করা ফসলাদি নিয়ে পাকা রাস্তায় উঠতে পারছিলেন না আর।
তারা বহুপথ ঘুরে তাদের ফসল বাড়িতে আনতে শুরু করেন। এই দেয়াল নির্মাণের কারণে সম্পূর্ণ অবরূদ্ধ হয়ে পরে ভোলাবো গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মহসিন মিয়া ও তার পরিবার। পরে তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বহু অনুনয় বিনিনয় করে ছোট একটা পকেট গেট রাখেন বাড়িতে যাতায়তের জন্য। তারা সে রাস্তা ধরে মাদ্রাসা মাঠ পেরিয়ে দ্বিতীয় বাধার মুখে পরেন মাদ্রাসার প্রধান ফটকে এসে। এই গেইটটি রাতদিনের বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে। দারোয়ানের হাত পা ধরে তালা খুলে তবেই যাতায়ত করতে পারেন তারা।
শিক্ষক মহসিন মিয়া জানান, এমন মানবেতর জীবন অন্য কোন মানুষের জীবনে আছে কি না আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন মানুষকেও ঘর করে দিচ্ছেন আর আমি একটু উন্মুক্ত রাস্তার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ১০ বছর যাবত দৌড়াদৌড়ি করেও পাচ্ছি না।
মহসীন মিয়ার ছেলে আরিফ আহমেদ বলেন, মাদ্রাসাটি ভোলাবো মৌজায়, আর আমাদের বাড়িটি মোচারতালুক মৌজায়। দুই মৌজার মাঝখানে ১০ ফিট জায়গা আছে। যেটা দখল করে মাদ্রাসা দেয়াল তুলে ফেলেছে। এই ১০ ফিট দখল তারা ছেড়ে দিলে আমরা চলাচলের রাস্তা পাই। গত ১০ বছর নিজের বাড়িতে থেকেও মনে হচ্ছে আমরা জেলখানায় বসবাস করছি।
এদিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে ক্যামেরা দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শিক্ষকরা। অনুমতি ছাড়া মাদ্রাসায় প্রবেশ করার জন্য কৈফিয়ত চান তারা। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা ইকবাল হাছান বলেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই গেইটে তালা দিয়ে রাখি। তবে মহসিন মিয়ার যাতায়তের জন্য অনুমতি দেয়া আছে।
মাদ্রাসার সভাপতি হাসান আশকারি মুঠোফোনে জানান, এখানে মাদ্রাসার ছাড়া অন্য কোন জমি আমার জানামতে নেই। তারপরও আমরা মহসিন মিয়ার চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া মহসিন মিয়ার চলাচলের জন্য আমরা একটা পকেট গেইট রেখেছি। আমরা মাদ্রাসার উত্তর দিক দিয়ে কৃষকদের চলাচলের জন্য একটা রাস্তা করার পরিকল্পনা করছি। এতে মহসিন মিয়ার কি উপকার হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার উপকারের দায়িত্ব তো আমার নয়। সেটা সরকার দেখবে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিমন সরকারের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের বিষয়ে আমার জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।