বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জ্বালাও পোড়াও মানুষ খুন, এটাই হচ্ছে একমাত্র বিএনপির গুণ। এটাই তারা পারে, আর কিছু পারে না। তারা আজ পর্যন্ত জনগণকে কিছুই দিতে পারেনি।’ আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের এ.কে.এম সামছুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা ২৩৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করি। বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন। আর বাকি আসন পেয়েছিল আমাদের জোটের দলগুলো। তারপর থেকে বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা নির্বাচনকে ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাস করে। ২০১৪-এর নির্বাচন বন্ধ করতে তারা ২০১৩ সাল থেকেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল। তারা ৩ হাজার মানুষকে পুড়িয়েছে যার মধ্যে ৫শত মানুষ মারা গেছে। ৩ হাজার ৮শ পরিবহণে তারা অগ্নিসংযোগ করেছে। জ্বালাও পোড়াও মানুষ খুন, এটাই হচ্ছে একমাত্র বিএনপির গুণ।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন ১ হাজার ৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। সেই সময় আমরা ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষকে সেবা দিতে শুরু করি। এর পরে ২০০৮-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে যখন আমরা ক্ষমতায় আসি তখন দেখি সেই বিদ্যুৎ কমে গেছে। মানুষ দেখি সামনের দিকে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পিছনের দিকে যায়। মাত্র ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছি। ঠিক তেমনিভাবে স্বাক্ষরতার হারও বিএনপির সময় কমে যায়। আমরা যেটা ৬৫ দশমিক ৫ ভাগ রেখে গিয়েছিলাম সেইটা বিএনপি আবার ৪৫ ভাগে নামিয়ে আনে। এ ছাড়া ৪০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আমরা গবেষণা শুরু করি। খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা ২০০৮-এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসি। ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করি। তারপর থেকে আমরা বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে কাজ করি। এর আগে কেউ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়াতে পারেনি। বর্তমানে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২ হাজার ৭শত ৯৬ মার্কিন ডলার। পাশাপাশি দারিদ্রের হার কমিয়ে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নিয়ে এসেছি, যা কি না বিএনপির আমলে ছিল ৪১ দশমিক ১ শতাংশ। মুজিববর্ষে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। তারই সুবাদে আজকে ৩৩ জেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত।’
আওয়ামীলীগ সভাপতি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আমরা করেছি। গত ১৫ বছরে নারাণয়গঞ্জ জেলা ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি নারায়ণগঞ্জ এসে একসময় নৌকা দিয়ে বন্দর গিয়েছি। সেখানে আমি তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু করে দিয়েছি। এ ছাড়া গাজী সেতু, সুলতানা কামাল সেতু করে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের এমআরটি লাইন-১ নারায়ণগঞ্জের মধ্য দিয়ে তিনটি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। এমআরটি লাইন-১, লাইন-২ এবং লাইন-৪ এগুলো সবই নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে যাবে। এ ছাড়া আড়াইহাজারে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। নারাণয়গঞ্জ সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির পর মঞ্চে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ.কে.এম শামীম ওসমান। পরে জনসভার সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তার বক্তব্যের পরই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ.কে.এম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, নারাণয়গঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনু ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শাহ নিজামসহস্থানীয় নেতারা।