বিজেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি এএইচ আসলাম সানির মালিকানাধীন ফতুল্লার ক্রোনী গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড বন্ধ করার প্রতিবাদ ও বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে কারখানাটির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ শ্রমিক। এতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে শিল্প পুলিশের সদস্যরা কারখানার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী) বকেয়া পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সকাল ১০টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করেন। গার্মেন্টটির শ্রমিকরা ডিসেম্বর মাসের আংশিক ও জানুয়ারি মাসের পূর্ণ বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেন কারখানাটির শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে ‘বেআইনিভাবে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ৷
শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা জানায়, কারখানাটির ডাইং ও নিটিংসহ বিভিন্ন সেকশনে অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত বলে জানিয়েছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিক শাহাদাত বলেন, সকালে গার্মেন্টে আসার পর আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। দেখি কারখানার সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে। মালিক আমাদের এখনো বেতন দেয়নি, কবে দিবে তাও বলেনি। তিনি প্রশ্ন করে বলেন- আমরা বাঁচবো কীভাবে?
নুরুন্নাহার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, কিস্তিতে সুদে টাকা তুলে চলছি। মালিক পাওনা বেতনই দিচ্ছে না। আমরা তো কারও কাছে দয়া চাই না। আমাদের কাজের বিনিময়েও টাকা দিচ্ছে না৷
শিল্প পুলিশ-৪ এর নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গণেশ গোপাল বিশ্বাস বলেন, সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বকেয়া পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি তাদের। কারখানার মালিকের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি। তিনি আগামী সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী) বেতন দেবেন বলে জানিয়েছেন। একথা শ্রমিকদের জানালে তারা আশ্বস্ত হয়ে বিক্ষোভ শেষ করেন।
সকাল সোয়া দশটার দিকে মিছিল করতে করতে শ্রমিকরা কারখানার সামনে থেকে সরে গেলেও শিল্প পুলিশের সদস্যদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।
কারখানা বন্ধের নোটিশে বলা হয়, গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে ‘বেআইনিভাবে ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে’ কর্মবিরতি পালন করেন। কর্তৃপক্ষ বারবার তাদেরকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য অনুরোধ করলেও তারা কর্মবিরতি পালন করেন। শ্রমিকদের এ ধরনের কর্মকান্ড বেআইনি ধর্মঘটের শামিল বিধায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা’ অনুযায়ী কারখানার সকল শাখা/বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করলো। কারখানার উৎপাদনের কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক ও নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ থাকিবে এবং একই সঙ্গে জানানো যাইতেছে কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক ও নিরাপদ হওয়া মাত্র পরবর্তী নোটিশের মাধ্যমে অতি দ্রুত কারখানা চালু করার তারিখ জানানো হবে।
প্রসঙ্গত: গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ‘অর্ডার কমে যাওয়ার’ কথা জানিয়ে ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড’ নামে কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়।