সিদ্ধিরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা শাহীন মিয়াকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সরল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ৩নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীনকে নিজের পরিবহন কাউন্টার থেকে প্রাইভেটকার যোগে তুলে নিয়ে যায় যুবলীগ নেতা সরল তার ভাই নিশাদ এবং ঢাকা মহানগর যুবলীগ নেতা হেলাল ফরাজি। এ ঘটনায় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ভুক্তভোগী শাহীন মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৮জনকে বাদি করে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী শাহীন বলেন, সে সাইনবোর্ড এলাকায় বাসের টিকিট বিক্রির কাজ করেন। সম্প্রতি সেখানে একটি চায়ের দোকান দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যুবলীগ নেতা সরল বাহিনী তার কাছে বার বার ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে তাকে সেখানে ব্যবসা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। শাহীন মিয়া চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে কয়েকবারই দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এরই জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সরল এবং তার ভাই নিশাদ ও হেলালসহ ৪/৫ জনের একদল সন্ত্রাসী বাহিনী সাইনবোর্ড টিকিট কাউন্টার থেকে প্রকাশ্যে অনেক মানুষের সামনে থেকে শাহীন মিয়াকে টেনে হেঁচড়ে একটি প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মিতালী মার্কেটের এক নম্বর ভবনে তাদের টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেখানে শাহীনকে লোহার পাইপ, হকিষ্টিক দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এমতাবস্থায় সে সরলের পায়ে ধরে জীবন ভিক্ষা চায়। এক পর্যায়ে যেভাবেই হোক দুই তিন দিনের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা যোগার করে এনে সরলকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় শাহীন। তারপর সরল ও তার বাহিনী চাঁদা প্রদানের শর্তে তাকে ছেড়ে দেয় এবং শাহীন যাতে আইনের আশ্রয় না নেয় তার জন্য হুমকি প্রদান করে। তবে ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে তারা শাহীনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভিডিও করে রাখে এবং বলে তুই বাড়াবাড়ি করলে এই ভিডিও প্রশাসনের কাছে দিয়ে বলবো তুই ছিনতাইকারী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফতুল্লা থানায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামী যুবলীগ নেতা সরল। সে আওয়ামীলীগ আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়ার ক্যাডার ছিলো। বর্তমানে সরল ও হেলাল ফরাজি বাহিনীর সন্ত্রাসী তান্ডবে আওয়ামীলীগের সময় থেকে সাইনবোর্ড স্টান্ড, মিতালী মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সম্পুর্ন জিম্মি। সাইনবোর্ড স্ট্যান্ড এবং মিতালী মার্কেটের কোনো ব্যবসায়ী তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে এখনো ব্যবসা বানিজ্য করতে পারে না। মিতালী মার্কেটের বিভিন্ন ভবনে রয়েছে তাঁর একাধিক টর্চার শেল। কেউ তাঁর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করলে বা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে তাদের বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে এসে এই টর্চার শেলে নিয়ে এসে নির্যাতন চালায়।
এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায়, যুবলীগ সন্ত্রাসী সরল ও হেলাল ফরাজি এবং তাদের বাহিনী এখনো তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দাপটে চালিয়ে যাচ্ছে। রোজার মধ্যে সরলের নেতৃত্বে মিজমিজি কান্দাপাড়া এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক পাপ্পু এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা টুটুলের বাড়ি করে সশস্ত্র হামলা করে। এই ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সরলের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হলেও পুলিশ সরলকে রহস্যজনক কারণে গ্রেপ্তার করেনি। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব ভূমিকায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সরলকে একাধিকবার কল করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া অভিযুক্ত হেলাল ফরাজিকে কল করলে তিনি বলেন, আমি শাহীন নামে কাউকে চিনি না। আমি কাউকে উঠিয়ে নিয়ে মারবো এমন কোন প্রশ্নই আসে না।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনুর আলম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করি। এসময় অভিযুক্ত কাউকে পাইনি। এঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
