শহিদ তাজুল স্মরণে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শ্রমিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১ মার্চ) বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহিদ মিনারে এ শ্রমিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রারম্ভে শহিদ তাজুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট মন্টু ঘোষ, হাফিজুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আবু হাসান টিপু, গার্মেন্টম শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অঞ্জন দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এইচ রবিউল চৌধুরী ও বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির নেতা নাছির হোসেন প্রমুখ।
সভায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আদমজী পাটকলে শ্রমিক ধর্মঘট বানচালের উদ্দেশ্যে তৎকালীন ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারি এরশাদের গুণ্ডাবাহিনী শ্রমিক মিছিলে হামলা করে তাজুলকে উপর্যুপরি ছুরিকাহত করে। ১ মার্চ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ও কলকারখানার লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসে। দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ (স্কপ) এর ৫ দফা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। সেই থেকে ১ মার্চ শহিদ তাজুল দিবস পালিত হয়।
তারা আরও বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষ এক দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। ফলে শ্রমিকরা তাদের খাদ্য তালিকা খাবার কমিয়ে, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা বন্ধ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে ৮৫ ভাগ শ্রমিক অপ্রতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। দেশে জাতীয় নিম্নতম মজুরি কোন আইন নেই। গার্মেন্টসে নিম্নতম মজুরি ঘোষিত হলেও নারায়ণগঞ্জে অধিকাংশ কারখানায় মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বিভিন্ন কারখানাগুলোতে ব্যাপক শ্রমিক ছাঁটাই চলছে।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকরা তার ন্যায্য দাবির কথা বললেই মারধর করে, মালিকরা শ্রম আইন ও বিধির শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী আইন ব্যবহার করে শ্রমিক ছাঁটাই করে, দেয় মিথ্যা মামলা। বর্তমান সংকটকালে শ্রমিকরা রেশনের দাবি করলেও সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। এ সময়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই শ্রমিকের অধিকার আদায়ের একমাত্র পথ। এক্ষেত্রে শহিদ তাজুলের আত্মত্যাগের সংগ্রামের শিক্ষা শ্রমিকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
নেতৃবৃন্দ শারমিন স্টিল অবিলম্বে চালু, সাম্পান সুজ লিমিটেডের ২ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ, পুনর্বাসন ছাড়া হকার ও রিকশা উচ্ছেদ বন্ধ এবং ব্যাটারি রিকশার রেজিস্ট্রেশন প্রদানের দাবি করেন।