যারা সরকারি চাকুরি করেন না তাদের অনেকের মধ্যে খেদ ছিল যে, সরকারি চাকুরেরা পেনশন পাচ্ছেন, আমরা কেন পাই না। তাদের জন্যই সরকার পেনশন স্কিমের মতো অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। আপনি যে বেসরকারি চাকুরি করেন, ব্যবসা করেন, বিদেশে থাকেন, আপনিও সরকারি চাকুরিজীবীদের মতো বেতন বা আয়ের একটা অংশ জমা রাখতে পারেন। ৬০ বছর বয়সের পরে মানুষের কর্মক্ষমতা অনেকটা কমে যায়, তখন আপনার একাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা চলে আসবে। শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সাংবাদিকদের সাথে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত অবহিতকরণ সভায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে দুই লাখ লোক টিসিবি কার্ডের আওতায় আছেন। সারাদেশে ১২৩ রকমের সামাজিক সহায়তা দেওয়া হয় জনসাধারণের মাঝে। ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজকে আপনারাই সাক্ষী যে সরকারি অনেক সেবা ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তব। বয়স্ক ভাতা প্রথমে চালু হয়েছিলো ১০০ টাকা করে। তিন মাস পরপর তিনশো টাকা করে দেওয়া হতো। এটি নিয়ে হাসাহাসিও হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া জানতেন যে একদিন এটি অনেক বড় তহবিলে পরিণত হবে। সত্যিই এখন দেড় লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয় সারাদেশে বয়স্ক ভাতা হিসেবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত তথ্য জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক বলেন, আমার অনেক আত্মীয় ৩০-৪০ বছর বিদেশে কাজ করে দেশে ফিরে নিঃস্ব অবস্থায় থাকেন। তাদের জন্যও এটি দারুণ এক সুযোগ। পেনশন স্কিম পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না। হয়তো কিছু কিছু থাকবে, কিন্তু জনসাধারণের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় বৃদ্ধাশ্রম কমবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। আমাদের সবারই কোনো না কোনো আত্মীয় বিদেশে থাকেন। সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের দর্পণ। আপনারা জনগণকে তথ্যগুলো পৌঁছে দিবেন যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারেন যে পেনশন স্কিমের আওতায় আসা দরকার। যারা ভিক্ষা করেন, যারা শ্রমিক, যারা দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন, তারা প্রত্যেকে আসতে পারবেন এর আওতায়। কেউ পাঁচ বছর বা দশ বছরের টাকা একবারে দিয়ে দিতে চান, তাদের জন্য সেই সুযোগও রাখা হয়েছে। সরকার কিন্তু সরকারের লাভের জন্য পেনশনের এই উদ্যোগ নেয়নি। আপনাদের নিরাপত্তার জন্যই করেছে। কেউ যদি মারা যান, তার নমিনি পেনশন পেতে থাকবেন। আমরা ২০৪১ সালে এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে দেশে রাস্তায় কোনো ভিক্ষুক থাকবে না, কোথাও অসহায় মানুষ থাকবে না। সেজন্যই এই উদ্যোগ। সরকারি চাকুরিজীবীদের স্ত্রী, সন্তানরাও এর আওতায় আসতে পারবেন। মোটকথা সর্বজনীন পেনশনের আওতায় সবাই এলে সমাজে বৃদ্ধাশ্রম ও ভিক্ষুক কমে যাবে বলে জানান তিনি।
এসময় তিনি ‘প্রবাস স্কিম’ ‘প্রগতি’ সুরক্ষা ও সমতা স্কিমের সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনাও দেন। সেইসাথে আগামীতে সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বড় পরিসরে মেলার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। এসময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দেদারুল ইসলাম পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন।
এসময় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই পেনশন স্কিম নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। সরকার সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি পেনশন স্কিম কার্যক্রম চালু করেছে। এটি নিয়ে শঙ্কা বা বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, আহসান সাদিক শাওন, কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান জুয়েল, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাকন, কার্যকরী সদস্য আবু সাউদ মাসুদ, মাহফুজুর রহমান, আব্দুস সালাম, সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাদল, রুমন রেজা, সিনিয়র সাংবাদিক সামসুল ইসলাম ভুইয়া, অহিদুল হক খানসহ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিপুল সংখ্য সংবাদকর্মীরা।