নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভার দিঘিরপাড়া এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক ভূমিখেকু ও আওয়ামী লীগ নেতা বারেককে অবশেষে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত বারেক মিয়া স্থানীয় দিঘিরপাড়া এলাকার মৃত শুকুর আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতা বারেকের সাজানো মামলার শিকার হয়ে এলাকার অনেক নিরীহ মানুষ এরই মধ্যে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা কায়দায় ভূমিদস্যু বারেক স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিকে সাজানো মামলায় ফাঁসিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে আড়াইহাজার থানায় মামলা করার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের আদালতেও এলাকার নিরীহ মানুষের নামে অর্ধডজন মামলা দায়ের করেছে এই বারেক। তার এই মামলায় আসামি করা হয়েছে শিবপুর, দিঘিরপাড়া ও লাসারদী গোয়ালপাড়া এলাকার একাধিক পরিবারের নিরীহ মানুষকে। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
সরেজমিন গিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, দিঘিরপাড়া এলাকায় আমি আমার পৈতৃক জমিতে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছি। আমার ভিটামাটি বলতে বসবাসের ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু এই জমিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে স্থানীয় ভূমিদস্যু বারেকের। আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে সে নানা কায়দায় আমার সামান্য জমিটুকু হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। সুবিধা করতে না পেরে এরই মধ্যে আমিসহ আমার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় ও নারায়ণগঞ্জের আদালতে সাজানো ও মিথ্যা মামলা করেছে। এতে আমি পরিবার ছেড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
বারেকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ শিবপুর এলাকার সিএনজি চালক দেলোয়ার হোসেনের। তিনি বলেন, আমি সামান্য কিছু জমি ক্রয় করে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছি। বাড়ি নির্মাণের সময় স্থানীয় ভূমিদস্যু খ্যাত বারেক প্রথমে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। তাতে আমি রাজি না হলে সে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আমার দুই ছেলেসহ আমার নামে পর পর দুইটি সাজানো মামলা দায়ের করেন। তার এই মামলায় আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
স্থানীয় লাসারদী এলাকার মৃত জাফরের ছেলে হারুন অভিযোগ করেন, তার বোন জামাতার জমিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে ভূমিদস্যু খ্যাত বারেকের। জমিটি হাতিয়ে নিতে সে নানা ফন্দি-ফিকির করে। আমি তাতে প্রতিবাদ করে আসছিলাম। ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমিসহ আমার আরেক ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় সাজানো একটি মামলা করেছে। এতে গ্রেপ্তার এড়াতে আমি পরিবার ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, বারেকের দায়ের করা সাজানো মামলাগুলোর তথ্য। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আড়াইহাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বনে যান বারেক। পদ পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। মানুষকে নানাভাবে হয়রানি ও মিথ্যা সাজানো মামলায় জড়িয়ে জমি-জমা হাতিয়ে নেয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বারেক নামের এই ব্যক্তি এলাকায় চরমভাবে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছে। তিনি নিরীহ মানুষের নামে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তার মামলার শিকার হয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন।