কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নবীজি (সা.) মুসলিমদের প্রথমবার মক্কা ছাড়ার অনুমতি দেন নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে। ৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে আরবি রজব মাসে চারজন নারীসহ ১২ বা ১৫ জন মানুষ আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) উদ্দেশে যাত্রা করেন। ‘মক্কার সবাই মুসলমান হয়ে গেছে’, এমন খবর শুনে সবাই কয়েক মাসের মাথায় জন্মভূমিতে ফিরে আসার পথে রওনা দেন। কাছাকাছি পৌঁছে শোনেন খবরটি মিথ্যা। কয়েকজন যে পথে এসেছেন সে পথেই ফিরে যাবেন বলে থমকে দাঁড়ান, কয়েকজন মক্কায় এসে থেকে যান। যাঁরা আবিসিনিয়ায় ফিরে যান, তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন নবীজির চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু তালিব (রা.)।
নবীজি তাঁদের সঙ্গে ছিলেন না। অবশ্য আবিসিনিয়ায় হিজরতকারীরা যখন আবার হেজাজের পথ ধরেন, ততদিনে নবীজি মক্কায়ও নেই। ৬২১ খ্রিষ্টাব্দের জুনের শেষ দিকে নবীজি ইয়াস্রিবে চলে গেছেন, যা পরে ‘মদিনাতুন্নবি’ অর্থাৎ নবীর শহর বা মদিনা নামে খ্যাত হয়েছে। আবিসিনিয়ার মুহাজিরগণ আরও প্রায় ৭ বছর পরে ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে সরাসরি মদিনায় এসে নবীজির (সা.) সঙ্গে মিলিত হন।
প্রশ্ন হলো, নবীজি (সা.) আবিসিনিয়া বা অন্য কোথাও না গিয়ে মদিনায় হিজরত করলেন কেন?
এর বেশ কয়েকটি কারণ প্রখ্যাত সিরাত গবেষক আবুল আলি নদভি (রহ.) তাঁর নবীয়ে রহমত গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রথমত, আল্লাহর নির্দেশ। কী রহস্য ছিল এই নির্দেশের পিছনে তা-ও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
দ্বিতীয়ত, ৬২১ ও ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হজের সুযোগে মক্কায় একদল মদিনাবাসী যেভাবে নবীজির (সা.) হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন এবং নবীজিকে রক্ষার সর্বত শপথ করেছেন, তা আল্লাহ অত্যন্ত পছন্দ করেছিলেন। মদিনাকে দারুল হিজরত ও ইসলামের দাওয়াতের কেন্দ্র হিসাবে নির্বাচনের পেছনে মদিনাবাসীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন ছিল তাই অন্যতম কারণ।
তৃতীয়ত, ইয়াস্রিবের ভৌগোলিক সুবিধা। পর্বত, ঘন খেজুরের বন আর ‘হাররা’ (লাভা স্থান) তিন দিক থেকে বেষ্টিত নিরাপদ অঞ্চল। কৃষি অঞ্চল। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সুদৃঢ় দুর্গ হিসেবে মদিনার অবস্থান তাই গুরুত্বপূর্ণ। আরব উপদ্বীপের কাছাকাছি আর কোনও শহর এ ব্যাপারে তার সমকক্ষ ছিল না।